- তথ্যসূত্র, স্মরণিকা-ডালনিয়া আই.এ.উচ্চ বিদ্যালয়।
১৯৬৭ সাল জুন মাস। বাঘাজুড়ি, কন্দর্পগাতী, ধবলিয়াসহ ডালনিয়ার লোকজন নিজ এলাকায় স্কুল প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। উক্ত উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যকে কেন্দ্র করে ডালনিয়া, বাঘাজুড়ি, কন্দর্পগার্তী, ধবলিয়া, বনগ্রাম, কংশুর, মালিবাতা, কাটরবাড়ী ও ডোমড়াগুরের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে ডালনিয়া মিটিং হয়।
মিটিং এ উপস্থিত ব্যক্তিবর্গ স্কুল করার জন্য সার্বিক সহযোগীতা ও দৃঢ়প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। স্কুলের স্বপ্নদ্রষ্টা ও উদ্যোক্তা জনাব আব্দুর রহমান সিকদারের নেতৃত্বে চলে অর্থ ও ধান সংগ্রহের কাজ। ডালনিয়া গ্রামের দুই ব্যক্তি জনাব আমির হোসেন সিকদার ও জনাব ইসমাইল খান নগদ (৫০০+৫০০) মোট ১,০০০/- (এক হাজার) টাকা দান করেন।
তাদের দানের প্রেক্ষিতে সভায় জনাব ইসমাইল খান ও জনাব আমির হোসেন সিকদার এর পিতা আলেফ সিকদার এর নামে বিদ্যালয় করার সিদ্ধান্ত হয়। সেখান থেকে বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয় ডালনিয়া আই,এ, জুনিয়র হাই স্কুল। বিদ্যালয়ের ক্লাশ শুরু করার কার্যক্রম ৩১ ডিসেম্বর ১৯৬৭ সালের মধ্যে শেষ করে ১ জানুয়ারি ১৯৬৮ সালে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি ও ক্লাশ শুরু করা হয়। ইতিপূর্বে শিক্ষক নিয়োগ সংক্রান্ত কাজ শেষ করা হয়।
পূর্ণ উদ্দোমে চলে ক্লাশ। শিক্ষকদের সংঙ্গে যুক্ত হয় স্থানীয় শিক্ষিত যুবকেরা, তারাও সার্বিক সহযোগিতা করেন। সমস্ত বাধা অতিক্রম করে ০১-০১-১৯৭০ সালে জুনিয়ার হাই স্কুলে অনুমোদন লাভে সমর্থ হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার জন্য যাদের অবদান চিরস্মরণীয়, তারা হলেন জনাব আব্দুর রহমান সিকদার, জনাব ময়েন উদ্দিন সিকদার, জনাব আমির হোসেন মোল্লা, জনাব আমির হোসেন সিকদার, জনাব ইসমাইল খান, বাবু কাশীশ্বর তালুকদার, বাবু কাঞ্জিরাম মাঝি, জনাব নাসির উদ্দিন মোল্লা, জনাব আব্দুর রহমান মোল্লা, জনাব আব্দুল ওয়াহেদ মুন্সি, জনাব ময়েন উদ্দিন খান, জনাব জালাল উদ্দিন ভূঁইয়া (জালু ভূঁইয়া), বাবু গদাধর বিশ্বাস, বাবু শরৎক্তন্দ্র বিশ্বাস (তিনি বিদ্যালয়ের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন) জনাব জামির হোসেন মুন্সী, জনাব আঃ ছাত্তার মোল্লা, ডাক্তার মনোরঞ্জন শীল, বাবু দীনবন্ধু বৈদ্য প্রমুখ ব্যক্তিবর্গ। এ ছাড়া এসব গ্রাম হতে ধানের মৌসুমে প্রতিঘর হতে ধান সংগ্রহ করা হত।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর জুনিয়র বিদ্যালয়টিকে পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুল করার চেষ্টা করা হয়। এভাবে চলে প্রায় দীর্ঘ আটটি বছর। ইতিমধ্যে প্রয়াত হলেন অনেক বিদ্যালয় হিতৈষি ব্যক্তিবর্গ। তখন পূর্ণ উৎসাহ উদ্দীপনায় যারা জীবিত ছিলেন তাদেরকে নিয়ে শক্ত হাতে জুনিয়র স্কুলকে এবার হাই স্কুল করার হাল ধরলেন জনাব আব্দুর রহমান সিকদার।
জনাব আব্দুর রহমান সিকদার ১৯৭৯ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবু কমলাখি তালুকদারকে হাই স্কুলের সহকারি প্রধান শিক্ষক এবং আবুল বশার মোল্লাকে প্রধান শিক্ষক হিসাবে নিয়োগ দিলেন । যার নতুন স্কুল করার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা ছিল। তিনি এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিসহ জনসাধারণ নিয়ে মিটিং করেন এবং বলেন যে, বিদ্যালয়টির অবস্থান যেহেতু মাঝিগাতী দশপল্লী এন.কে উচ্চ বিদ্যালয়ের কাছাকাছি সেহেতু, বিদ্যালয়টিকে স্থানান্তরিত না করলে পূর্ণাঙ্গ হাই স্কুল করা সম্ভব নয়। উপস্থিত জনতা তার সিদ্ধান্তে সম্মতি জ্ঞাপন করলেন এবং সিদ্ধান্ত হল আগামী বার্ষিক পরীক্ষার পরে ডিসেম্বর মাসের শীতকালীন ছুটিতে বিদ্যালয়টিকে ডালনিয়া গ্রামের উত্তর প্রান্তে স্থানান্তর করা হবে।
চলে স্থান নির্বাচনের কাজ। অবশেষে জনাব আমির হোসেন মোল্লা স্কুলের জন্য ১২ শতক জায়গা দান করলেন । উক্ত জায়গার উত্তর পার্শ্বে গর্ত করে দক্ষিণ পার্শ্বে ভিটা করে ৬০ হাত লম্বা ও ১২ হাত চওড়া বিদ্যালয় গৃহটি পুনঃস্থাপন করা হল।
কিন্তু জটিলতা বাঁধল বিদ্যালয়ের নবম-দশম শ্রেণীর সরকারী অনুমোদন পেতে। কারণ, সরকারী অনুমোদন পেতে হলে নিয়মানুযায়ী সরকারী কাগজপত্র তৈরী ও প্রতিষ্ঠানের তহবিলে তৎকালীন বিশাল অঙ্কের টাকা প্রয়োজন হয়ে পড়ল। তখন এগিয়ে আসলেন বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা।
১৯৭৯ সালের ডিসেম্বর মাসে জনাব আব্দুর রহমান সিকদার নিজের পাকাধানের জমি বন্ধক রেখে বিদ্যালয়ের সাধারণ তহবিল ও স্থায়ী তহবিলে মোট ১০,০০০ (দশ হাজার) টাকা জমা দিয়ে বিশাল অবদান রাখেন এবং পরবর্তীতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ তাঁর জমাকৃত অর্থ পর্যায়ক্রমে ফেরত দেন।
অতপর, জনাব আব্দুর রহমান সিকদারের সেই জমি বন্ধকীর টাকা বিদ্যালয়ের ফান্ডে জমাদানের প্রেক্ষিতে ০১-০১-১৯৮১ তারিখ হতে সরকারীভাবে নবম/দশম শ্রেণি খোলার অনুমতি পাওয়া গেল এবং তারই ধারাবাহিকতায় গোপালগঞ্জ জেলার স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতায় ২০১-০১-১৯৮২ সালে সরকারী স্বীকৃতিও প্রাপ্ত হয়।
ইত্যবসরে ৬০ হাত লম্বা ও ১২ হাত চওড়া ঘরটিকে পশ্চিম ও পূর্বদিকে প্রসারিত করে ইউ আকৃতি গৃহ রূপান্তর করা হয়। ১৯৯৮- ১৯৯৯ সালে ফ্যাসিলেটিজ ডিপার্মেন্টর ৩ কক্ষ বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মিত হয়।
ক্রমান্বয়ে বিদ্যালয়ের অবকাঠামো উন্নয়ন, লেখাপড়ার মান-উন্নয়নসহ ফলাফল সন্তোষজনক পর্যায়ের নেওয়ার জন্য শিক্ষক অভিভাবক ও ম্যানেজিং কমিটি প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এভাবেই সকলের সহযোগীতায় তিলে তিলে গড়ে ওঠে আমাদের প্রাণের ডালনিয়া আই.এ উচ্চ বিদ্যালয়।
- ঈষৎ সংক্ষেপিত