বিদ্যালয়টি গড়তে প্রতিষ্ঠাতার ক্লান্তিহীন নিরলস যাত্রার সংক্ষিপ্ত এক স্মৃতিচারণ
নিজে বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চ ডিগ্রি ধারণ না করেও যে শিক্ষার প্রসারে, প্রচারে অবদান রাখা যায় তার জ্বলন্ত প্রমাণ জনাব আব্দুর রহমান শিকদার। গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার ডালনিয়া গ্রামের এই কৃতি সন্তান জনাব আব্দুর রহমান সিকদার।
এলাকার শিক্ষার উন্নয়নে, মানুষকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করার লক্ষ্যে নিজের সময় এবং অর্থ ব্যয় করে যে মানুষটি ডালনিয়ার এই হাইস্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন(১৯৬৮সালে) তিনিই আব্দুর রহমান সিকদার।
তখন এই এলাকায় ধারে কাছে কোন স্কুল ছিল না। ডাল নিয়া থেকে মাঝিগাতী / গোপালগঞ্জ যেতে হলে নৌকাই ছিল একমাত্র বাহন ।তখন ও কোন পাকা রাস্তা হয়নি। এমনকি শুকনার মৌসুমে খালপাড় দিয়ে হেঁটে যাওয়া ও বেশ কষ্টকর ছিল। সরাসরি কোন রাস্তা ছিল বলে আমার মনে পড়ে না।
আমি সেই সত্তরের দশকের কথা বলছি।
গোপালগঞ্জ থেকে যেতে হলে টাবুরে নৌকা বা ছৈঅলা নৌকায় করে যেতে হতো। পথে সম্ভবত বেদবাড়িয়াতে বেশ বড় গোলা ছিল। গোলা কি সেটা হয়তো এখনকার প্রজন্ম অনেকটা ভালো না জানারই কথা। নৌকা নিয়ে এই গোলা পার হওয়া যথেষ্ট শংকা বা আশংকার বিষয় ছিল।
যতদূর মনে পড়ে আব্দুর রহমান শিকদার সাহেবের বাড়ি থেকে অথবা আশেপাশের কোন এলাকা থেকে স্কুলে আসার জন্য কোন রাস্তা ছিল না। থাকবে কি করে পুরাটাই যে বিল এলাকা।
শীত বা শুকনো মৌসুমে পায়ে হেঁটে পথচলা পথের মাধ্যমে স্কুলে আসতে হতো।
বর্ষার সময় নৌকাই ছিল একমাত্র মাধ্যম বা বাহন। সম্ভবত তালের ডোংগা বা কলা গাছের ভেলা ও ছিল যাতায়াতের মাধ্যম।
অত্র এলাকার অবস্থাপন্ন মানুষদের একজন ছিলেন আব্দুর রহমান শিকদার। তবে মননে ও চিন্তায় তিনি ছিলেন অন্যদের চেয়েও অগ্রগামী ---এ কথা অস্বীকার করলে তার অবদান কে খাটো করে দেখা হবে।
তিনি প্রায়ই ঢাকা আসতেন বোর্ডে স্কুলের কাজের জন্য।
আমাকে অনেক স্নেহ করতেন বিধায় উনি ঢাকাতে আসলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার আবাস স্হল হাজী মোহাম্মদ মহসিন হলে আসতেন। আমি উনাকে জোর করে আমার রুমে রেখে দিতাম।
কখনো কখনো আমি নিজেও উনার সাথে বোর্ডে স্কুলের কাজে গিয়েছি।
তখন স্কুলের প্রতি তার এই আন্তরিকতা দেখে আমি নিজেও অনেক অভিভূত হয়েছি।
মাঝে মাঝে মনে হয় আমি সরকারের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা পদে অবস্থান করেও শিক্ষার ক্ষেত্রে তার ন্যায় অবদান রাখার সুযোগ পেয়েছি কিনা সে বিষয়ে প্রশ্ন করার হয়তো বা অবকাশ আছে।
কেননা তিনি নিজে যে অবস্থায় থেকে, তখনকার যে পরিবেশে এই ইস্কুলের জন্য যে শ্রম এবং আর্থিক সহযোগিতা করেছিলেন সেটি অনুসরণীয়, অনুকরণীয় ও উল্লেখযোগ্য বিষয়।
জনাব আব্দুর রহমান সিকদার সাহেবের মত মানুষ সবসময়, সব যুগেই প্রয়োজন।
জনাব আব্দুর রহমানের শিকদারের "জীবন ও কর্মের " উপর এই স্কুলের পক্ষ থেকে একটা প্রকাশনা থাকা উচিত বলে আমি মনে করি।
প্রায় ৪২/৪৩ বছর হল ওই স্কুলে বা ডালনিয়া গ্রামে আমার যাওয়া হয় না।
সুযোগ হয় নাই সশরীরে গিয়ে আব্দুর রহমান শিকদারের সাহেবের কবর জিয়ারত করার। উনার কবরটি কি হালে আছে আমি জানিনা ।
তবে অন্যদের কে উৎসাহিত ও ভালো কাজে অনুপ্রাণিত করার জন্য হলেও তার কবরটি বাধাই করে বা অন্য যে কোনো ভাবে মার্ক করে রাখা দরকার(যদি তার ইতোমধ্যে কর না হয়ে থাকে)।
স্কুলের পক্ষ থেকে তার জন্ম বা মৃত্যু বার্ষিকীতে মিলাদ/ দোয়া মাহফিল এর আয়োজন করা যেতে পারে---- বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও কমিটির সদস্য মন্ডলী, প্রধান শিক্ষক ও শিক্ষক মন্ডলী---- সকলের প্রতি আমার অনুরোধ রইলো।
জনাব আব্দুর রহমান সিকদার সাহেবকে আল্লাহতালা জান্নাতুল ফেরদাউস নসীব করুন-- এই প্রার্থনা করি।
---মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ
সাবেক শিক্ষাসচিব, বাংলাদেশ শিক্ষামন্ত্রণালয়।
মোবাইল:+8801772122144
Email: secretarymunshi@yahoo.com
বিঃদ্রঃ লেখকের ফেসবুক থেকে সংগৃহীত